ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়া আসনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবী জনতার

জাকরে উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার :
জাতীয় সংসদের (২৯৪) কক্সবাজার-১ বৃহত্তম উপজেলা চকরিয়া ও পেকুয়া নিয়ে সংসদীয় আসনটি গঠিত। এ আসনে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে ধানের র্শীষ ও নৌকা প্রতীকের মধ্যে। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন, সাবেক এমপি এডভোকেট হাসিনা আহমেদ। সুষ্ঠ ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে চকরিয়া ও পেকুয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন ঐক্যফ্রান্টের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ দু’ উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১লাখ একর জমিতে প্রতিবছর চিংড়ি চাষ হয়। এসব চিংড়ি ঘেরে ডাকাত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে ঘের চাষীদের হাতে যেমন অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তেমনি স্বশস্ত্র ডাকাত দলের হাতেও রয়েছে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র। এসব অবৈধ অস্ত্র ভান্ডার থেকে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভাড়াটিয়া হিসেবে নির্বাচনের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা ও ব্যালেট বক্স ছিনতায়ের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন, সাধারণ ভোটাররা। তাই তারা নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও র্শীষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন।
এ আসনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনের পর বিএনপির তৎকালিন সিনিয়র সহসভাপতি প্রয়াত নেতা মাহমুদুল করিমের কাছে ১৯৮৯ সালে পরাজিত হন, তৎকালিন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.জহিরুল ইসলাম। এর পর এরশাদ সরকারের আমলে পর পর ২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যান, এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদের কাছে তৎকালিন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.জহিরুল ইসলাম। ১৯৯১ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামায়াত প্রার্থী এনামুল হক মঞ্জুর কাছ থেকে চতুর্থ বারের মত তৎকালিন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.জহিরুল ইসলাম হেরে গিয়ে আওয়ামীলীগের দল থেকে তিনি পদত্যাগ করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বধীন গণফোরামে চলে যান। এর পর আ’লীগের মনোনয়ন পান সাবেক জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। তিনি ২ বার সাবেক প্রধান মন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার এপিএস ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের কাছ থেকে ২ বার ও তার সহধর্মীনি এড.হাসিনা আহমদের কাছ থেকে ১ বার পরাজিত হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার বিহীন জাপার জেলা সভাপতি মৌলভী ইলিয়াছ এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। বিগত ৮টি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা বিএনপি থেকে ৪ বার, জাপা(এরশাদ) থেকে ৩ বার ও জামায়াত ইসলামীর কাছ থেকে ১ বার হেরে যান। স্বাধীনতা পরবর্তী এ পর্যন্ত একবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী বিজয়ের মূখ দেখেন নি।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এড.হাসিনা আহমদ ১,৫৬,৫১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটমত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। তার প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে, ১লাখ ২১ হাজার ১১১। তাদের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল, ৩৫ হাজার ৪শ ১টি। এবার আওয়ামীলীগ প্রার্থী পরিবর্তন করে মনোনীয়ন দিয়েছেন, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলমকে। তিনি সাবেক চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনে নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চকরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকায় আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সাথে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। ফলে বিএনপি প্রার্থী এড. হাসিনা আহমদ প্রশাসনের কাছে তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছেননা। এ অভিযোগ ঐক্যফ্রান্টের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। গত ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার চকরিয়া পৌর সদরে বিএনপির গণসংযোগ কালে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় সাবেক পৌর মেয়র ও বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম হায়দার ও যুবদল নেতা জুয়েল, জকরিয়া এবং নুরুল আমিনসহ ৭/৮ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। পরে এ ব্যাপারে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী এড. হাসিনা আহমেদ চকরিয়া থানার ওসি বরাবরে এ অভিযোগ জানাতে গিয়ে, তিনিসহ তার দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের কাছে থানার ভিতরেই অবরোদ্ধ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তারা হমলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে প্রকাশ্যে গণসংযোগও করতে পাচ্ছেনা। বিভিন্ন এলাকায় তাদের নির্বাচনী ক্যাম্প ও পোষ্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই ওই তিন কর্মকর্তাকে চকরিয়া থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবী জানানো হয়েছে। না হলে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চকরিয়া-পেকুয়া আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতিসহ অসংখ্যা প্রাণহানির আশংকা প্রকাশ করছেন সচেতন এলাকাবাসী।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জাফর আলম জানান, অতীতে এ আসনে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ৪০ বছর ধরে আসনটি আওয়ামীলীগের হাতছাড়া। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি এ আসনটি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি নিজ দলের পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা অস্বিকার করেছেন।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে, মোট ভোট কেন্দ্র হচ্ছে, চকরিয়ায় ৯৯টি ও পেকুয়ায় ৪০টি। চকরিয়ায় পুরুষ ভোটর সংখ্যা হচ্ছে, ১লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন। আর নারী ভোটার হচ্ছে, ১লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন। পেকুয়ায় পুরুষ ভোটার হচ্ছে, ৫৬ হাজার ৬১০ জন ও নারী ভোটার হচ্ছে, ৪৪ হাজার ৬৫০ জন। চকরিয়ায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে, ২লাখ ৮৪ হাজার ৪শ ১১ জন। পেকুয়ায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে, ১ লাখ ১ হাজার ২৬০ জন। চকরিয়া পেকুয়া মিলে এ সংসদীয় আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে, তিন লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৬ জন।
ঐক্যফ্রান্টের প্রার্থীর পক্ষ থেকে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে, এ দু’ উপজেলার ১৪৯টি কেন্দ্রই ঝুকিপূর্ণ। ভোট কেন্দ্র দখল ও ব্যালেট পেপারে সীল মারার ঘটনা না ঘটলে, এ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী এড.হাসিনা আহমদের বিজয় ঠেকানো সম্ভব নয়।
অপরদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাফর আলম দাবী করেছেন, গত ৪০ বছর ধরে এ আসনে আলেম সমাজ ও মহিলারা ভোট না দেয়ায় আসনটিতে একবার ও বিজয় হয়নি আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা। এবার তিনি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে জোরে শোরে কাজ শুরু করেছেন।

বিগত সময়ের নির্বাচনে ৪ বার বিএনপি, ৩ বার জাতীয় পাটি ও একবার জামায়তা সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। উল্ল্যেখ্য যে, চকরিয়া-পেকুয়া আসনটি জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের দূর্গ। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগন লাইন ধরে যার ভোট সে প্রয়োগ করতে পারলে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের বিশ্বাসী প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে বলে ভোটারদের বদ্ধমুল ধারণা।
গত ১০ বছর ধরে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা হত্যা, গুম, মামলা ও হামলার ভয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে না পারলেও ভিতরে ভিতরে তারা ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কাঠামো অত্যান্ত শক্তিশালী বলে দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তাদের আশংকা ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্র দখল, ব্যালেট বাক্স ছিনতাই ও ব্যালেট পেপারে জোরপূর্বক সীল মারতে না পারলে এবারের নির্বাচনেও তাদের বিজয় ঠেকানো আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব নয় বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের বদ্ধমূল ধারণা।
বর্তমান দু’উপজেলার প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কোন রদবদল না হওয়াতে প্রশাসনের পক্ষপাত আচরণ নিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা শংখিত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে এ দু’ উপজেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রদ-বদলের দাবী জানিয়েছেন।
এ আসনে, চকরিয়ায় ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং পেকুয়ায় ৭টি ইউনিয়ন। এ দু’ উপজেলায় সর্বমোট ২৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৬ জন।
উল্ল্যেখ্য যে, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ১লাখ একর জমিতে প্রতিবছর চিংড়ি চাষ হয়। এসব চিংড়ি ঘেরে ডাকাত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে ঘের চাষীদের হাতে যেমন অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তেমনি স্বশস্ত্র ডাকাত দলের হাতেও রয়েছে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র। এসব অবৈধ অস্ত্র ভান্ডার থেকে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভাড়াটিয়া হিসেবে নির্বাচনের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা ও ব্যালেট বক্স ছিনতায়ের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন, সাধারণ ভোটাররা। তাই তারা নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও র্শীষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: